শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১২

নিজের রেডিও
মোঃ শাহাদত হোসেন


‘উত্তরণ নিউজ লেটার' যখন রেডিও নিয়ে তার প্রথম প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেয়, তখনই আগ্রহ ভরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ প্রতিযোগিতায় লেখা পাঠাব। কিন্তু লিখতে বসে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম-কি লিখব! কেননা বিগত ২৪ বছরের ডি-এক্সিং সময়ের অধিকাংশটাতেই আমার নিজের কোনো রেডিও ছিলো না এবং ২৪ বছরের মধ্যে কখোনই আমি কোনো রেডিও কিনিনি। অথচ বিগত দু'যুগ ধরে রেডিও আমার নিত্য সঙ্গী, সবচে বড় বন্ধু, সবচে প্রিয় আপনজন।

বিষ্ময়ে অবিভূত হতে হয়! নিজের কেনা রেডিও ছাড়া দীর্ঘ দু'যুগ ধরে ডি-এক্সিং করছে, এমন ব্যক্তি দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা আমার জানা নেই। পাঠকদের জানা থাকলে, তার যোগাযোগ ঠিকানা আমাকে পাঠানোর অনুরোধ রইল।

১৯৮২ সাল। আমি তখন ঢাকার রামপুরা একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। যোগাযোগ হয় ইকবাল ভাইয়ের বাংলাদেশ ডিএক্স ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবের সাথে। আগ্রহ সৃষ্টি হয় রেডিও শুনার, বিশেষ করে শর্টওয়েভ বিদেশী বেতারের অনুষ্ঠান শুনার। কিন্তু আমার নিজের বা বাসায় কোনো রেডিও নেই। দ্বারস্থ হলাম পাশের বাসার শাহজাহানের, যে আমার দূরসম্পর্কীয় কাজিন হয়। ওর ছিলো সনি ফোর ব্যান্ড রেডিও কাম রেকর্ডার। প্রতিদিন সকাল আর সন্ধ্যায় ওর বাসায় শর্টওয়েভে বিদেশী বেতারের অনুষ্ঠান শুনতাম, রিসেপশন রিপোর্ট ও চিঠি পাঠাতাম, পেতাম বৈচিত্রময় উপহার সামগ্রী।

রেডিও শুনার সুবাধেই শাহজাহানের সাথে অত্যাধিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ওর বাবা-মা-ভাবীর সাথে সৃষ্টি হয় আত্মিক সম্পর্ক। অতি অল্পদিনেই ওদের সাথে আমার সম্পর্কটা এমন হয়ে গেলো যে, ওর রেডিওটাই হয়ে গেলো আমার রেডিও, ওদের বাসাই হয়ে গেলো আমার বাসা। ফলে আমি নিজে রেডিও কেনার কথা ভুলেই গেলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠার আগ পর্যন্ত আমার এ মধুময় জীবন অব্যাহত ছিলো।

আমি যদি কোনো কারণে কোনো দিন নির্দিষ্ট সময়ে রেডিও শুনতে না যেতাম তাহলে শাহজাহানের বাবা-মা উৎকণ্ঠায় থাকতেন, শাহজাহান এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যেত। অধিকাংশ দিনই সকাল আর রাতের খাবার খেতে হতো ওদের বাসায়। কোনোদিন যদি খেতে খুব আপত্তি করতাম, ওর মা বলতো, ‘ব্যাটা, তোমার জন্যও তো রান্না করেছি। এখন না খেলে যে তা নষ্ট হবে। ওরা আমাকে ওদের পরিবারের একজন সদস্য ভাবতো। সে সম্পর্ক আজও অটুট আছে।

এখন ভাবি সেদিন যদি কোনোভাবে একটা রেডিও কিনে ফেলতাম তাহলে ঐ পরিবারের সাথে আমার এ সম্পর্ক সৃষ্টি হতো না। শাহজাহানের রেডিওটা শুধু আমাকে ডি-এক্সিং করার সুযোগ দেয়নি, বিশাল পৃথিবীর মধ্যে কিছু মানুষকে আপনজন করে নেবার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে জিয়া হলে উঠার পরই শুরু হলো বিপদ। নিজের রেডিও নেই, হলেও কোনো রেডিও নেই (পরে অবশ্য আমার প্রচেষ্টায় হলের পত্রিকা রুমে একটা রেডিওর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো), অথচ রেডিও না শুনলে সকাল-সন্ধ্যা আমার অস্বস্তিতে কাটে। প্রতিটি সকাল আর সন্ধ্যা আমার কাছে দূর্বিসহ মনে হতো। হলে উঠার কারণে নিজের খরচও বেড়ে গেলো, ফলে তখনই একটা ভালো রেডিও কেনার কথা ভাবতেও পারছিলাম না। ঢাকা কলেজে পড়া অবস্থায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অন্যতম ছিলো অরুণ। আমি ওকে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রের আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী দিতাম। সেও আমার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বাসা থেকে এসে ক্লাস করে, মাঝে মধ্যে আমার রুমে এসে বিশ্রাম নেয়। ও আমার রেডিও না থাকার দুঃখ উপলব্ধি করে আমাকে কিছু টাকা ধার দেয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি সানন্দে তাতে সম্মত হই।

কিন্তু বিধি বাম। আমার আর রেডিও কেনা হলো না। অরুণ আমাকে যেদিন টাকা দেয়ার কথা, তার এক সপ্তাহ আগে ওর দুলাভাই বিদেশ থেকে আসেন। তিনি তাঁর বাসার জন্য অতি সুন্দর টুয়েলভ ব্যান্ডের ছোট একটা রেডিও নিয়ে আসেন। অরুণ তার দুলাভাইকে আমাদের দু'বন্ধুর ঘনিষ্ঠতার কথা বলে, আমার অনেক প্রশংসা করে, আমার ডি-এক্সিংয়ের কথা বলে, তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে সে রেডিওটা আমাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করে।

রেডিও উপহার পেয়ে আমার রেডিও কেনার পরিকল্পনা বাতিল হলো এবং এ রেডিওটা অরুণদের পরিবারের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দিলো। শুধু তাই নয়, জিয়া হলে আমার রুমমেট ও পাশের রুমের ছাত্রদের সাথেও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে সহায়তা করে। রুমমেটরা মিলে রেডিও শুনতাম, মাঝে মধ্যে অন্য রুমের ছাত্ররাও এসে যোগ দিতো। সকলের আগ্রহে উৎসাহে আমি একটি লিস্‌নার্স ক্লাব গড়ে তুলি।

রেডিওটা আমার হলের জীবনটাকে বদলে দিলো। নিরানন্দ ও বিষাদময় থেকে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে ভরে উঠলো আমার জীবন। আত্মীয়-পরিজনের অভাব ভুলিয়ে দিলো রেডিওটা।

মাস্টার্স পরীক্ষার পর পরই রেডিওতে ক্রটি ধরা পড়লো। মোহাম্মদপুরে আমার এক বন্ধুর রিপিয়ারিংয়ের দোকান আছে। ওকে দিলাম মেরামত করতে। ঠিক করে দিচ্ছি দিচ্ছি করে সে দেরি করতে লাগলো। চাকুরি নিয়ে চলে এলাম, রেডিওটা আর আনা হলো না। জানিনা আমার দীর্ঘ ৬/৭ বছরের সাথী সে রেডিওটা এখন কোথায়, কার কাছে, কেমন আছে? মাঝে মধ্যে ঐ রেডিওটার জন্য আমার মনটা আনচান করে উঠে। বুকের মাঝে একটা শীতল স্রোত বয়ে যায়।

সুনামগঞ্জ এসে উঠলাম আমার এক নানার বাসায়। তিনি সৌখিন ও সচেতন মানুষ। বিদেশি বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনার জন্য তাঁর রয়েছে অতি উন্নতমানের একটি রেডিও। ফলে অতি সহজেই আমার রেডিওর অভাব দূর হলো। তবে মাঝে মধ্যে তাঁর সাথে খুনসুটি লেগে যেতো। আমি এক বেতারের অনুষ্ঠান শুনতে চাইতো তিনি অন্য বেতারের। আমার দরকার রিসেপশন রিপোর্ট লেখা, আর নানার দরকার খবরের।

চাকুরি, বিয়ে, বাসা, সংসার স্থানীয় সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কোথা দিয়ে যে বেশ ক'টি বছর চলে গেলো। ভাবছি একটা উন্নতমানের রেডিও কিনবো, কিন্তু এবারও বিধি বাম। রেডিও আর কেনা হলো না। ২০০৫ সালের প্রারম্ভে ডয়চে ভেলে আমাকে একটি ডিজিটাল রেডিও উপহার হিসেবে পাঠালো, GRUNDIG Yacht Boy 80. সে থেকে এটি আমার নিত্য সঙ্গী।

ভাবছি, উত্তরণের পাঠক বা সম্পাদক হয়তো ভাবছেন, রেডিও নিয়ে মজার মজার ঘটনা লেখার ঘোষণা দিলাম- আর তিনি লিখে ফেললেন দীর্ঘ এক রচনা। কিন্তু আপনারা ভেবে দেখুন, নিজের কেনা রেডিও ছাড়া একজন ডি-এক্সারের ২৪ বছর পার করার চেয়ে বিষ্ময়কর ঘটনা আর কি হতে পারে!
- সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, সুনামগঞ্জ থেকে

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১২

যুদ্ধকালীন বেতার
প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম




খুব ছোট বেলা থেকেই রেডিও শোনার প্রতি আমার দূর্বলতা সৃষ্টি হয়। গ্রামে তখন খুব কম লোকেরই রেডিও ছিলো। এসময় বাবার একব্যান্ড রেডিওতে গান শুনতাম। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বাড়ীতে যুদ্ধের খবরা-খবর শোনার জন্য গ্রামের অসংখ্য মানুষ ভীড় জমাতেন। স্বভাবতই রেডিওর অপারেটর ছিলাম স্বয়ং আমি। বৈঠকখানায় চৌকির উপর বসে আমি ‘অল ইন্ডিয়া রেডিওর' সংবাদ ধরাতাম। আমার চারদিকে বসে গ্রামের শত-শত উৎসুক মানুষ অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রচারিত যুদ্ধের সংবাদ শুনতেন। যেহেতু রেডিওটি ছিলো আমার এবং আমিই ছিলাম অপারেটর সেহেতু নিজেকে আমার তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেই মনে হতো। ঐ সময় অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সংবাদ পাঠ করতেন দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায়, নীলিমা স্যান্যাল, অনিল চট্টপাধ্যায় (এক সময় তিনি ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগেও কাজ করেছেন) প্রমুখ। যুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চরম পত্র শিরোনামে সমকালীন ঘটনা নিয়ে বাস-ব ভিত্তিক ব্যঙ্গ সংবাদ পাঠ করতেন এম. আর. আখতার মুকুল, যা শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। যুদ্ধকালীন সময়ে রেডিও গণ-তথ্য মাধ্যম হিসেবে জনজীবনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ছোট্ট সেই CITIZEN একব্যান্ড রেডিও এবং সবাই মিলে যুদ্ধকালীন বেতার শোনার স্মৃতি আজও আমার মনকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।

- আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা থেকে
শ্রোতা অত:পর চিলিন শ্রিফান্‌ বিশ্ববিদ্যালয়
তাপস বিশ্বাস

তাপস নিজে

আমি তাপস বিশ্বাস। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র ইন্টারমিডিয়েট। বর্তমানে চীনের চিলিন প্রদেশের চিলিন শ্রিফান্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষার ওপর লেখা-পড়া করছি। আমার Background on study হলো- আমি শিশু শ্রেণীতে পড়াশোনাকালীন সময়ে আমার মা আমাকে একটি শিশু শ্রেণীর বই কিনে দেন। বইটিতে চীন দেশের শিশু নামে একটি গল্প এবং চীনা শিশুদের কয়েকটি সুন্দর ছবি ছিল। মা বলতেন, দেখ তাপস চীনা শিশুরা কত সুন্দর! তুমি যদি ভাল করে লেখাপড়া কর তাহলে তাদের মতো হতে পারবে। তখন থেকেই চীন দেশ ও চীনা শিশুদের প্রতি আমার আগ্রহ জাগে এবং আকর্ষণ বাড়তে থাকে। কিন্তু আমি ছাত্র অবস্থায় লেখাপড়ায় তেমন একটা ভাল ছিলাম না। একেক শ্রেণীতে সাধারণভাবে পাস করে পরবর্তী শ্রেণীতে ভর্তি হই। অষ্টম শ্রেণীতে ‘চৈনিক সভ্যতা এক পরম বিষ্ময়' নবম শ্রেণীতে ‘মহাচীনে কয়েকদিন' নামক প্রবন্ধ দুটি পড়ার পর আমাকে চরমভাবে চীনের প্রতি আকর্ষণ করে। তখন চীনের সাথে আমার কোনই যোগাযোগ নেই। বন্ধু বান্ধবও নেই। কিন' চীনা সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে দেখতে আমার ই"ছা করে। আমি সবেমাত্র একজন নবম শ্রেণীর ছাত্র। চীনে আসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও নেই। সুতরাং চীনে আসা খুবই কঠিন। এদিকে অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষায় একবছর অকৃতকার্য হই এবং দশম শ্রেণীতে টেস্ট পরীক্ষায় পর পর দুবার অকৃতকার্য হই। শেষে এই বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। লেখাপড়ায়ও মন বসে না, কী করব? একটি রেডিও সেট নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াই আর ছায়াছবির গান শুনি। এভাবেই দিন কাটতে থাকে। একদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে রেডিও সেটের টানিং ঘুরাতেই শিশুদের কন্ঠের মত শ্র"তিমধুর বাংলা কথাবার্তা শুনতে পাই, তখন আমি সাথে সাথেই রেডিও সেটটির স্টেশন ভাল করে সনাক্ত করি। পরদিন একই সময়ে আমি আবার ঐ স্টেশনে যাই এবং শুনতে পাই সিআরআইয়ের বাংলা অনুষ্ঠান। এরপর থেকে প্রতিদিন অনুষ্ঠান শুনতে থাকি। অনুষ্ঠান খুব ভালো লাগে। ৫/৬দিন পর অনুষ্ঠান থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করি এবং চীনে চিঠি পাঠাই। প্রায় একমাস পর চীন থেকে আমার কাছে প্রথম চিঠি আসে, তখন আনন্দে আমি আত্মহারা। মনে মনে শুধু ভাবি সুদূর চীন দেশ থেকে আমার কাছে চিঠি এসেছে। এরপর থেকে সিআরআইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ চলতে থাকে। সিআরআই আয়োজিত বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দু/একবার পুরস্কার পেয়েছি। চীনের একশ বছর শিরোনামে ২০০১ সালে সিআরআইয়ের বাংলা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত জ্ঞানযাচাই প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নিতে এসে চীনা দূতাবাসে উত্তরণ সিআরআই লিস্‌নার্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মি. মঞ্জুর"ল আলম রিপন ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমার স্ন্যাফও নিয়েছেন। ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করার পর ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরকারি কলেজে মেনেজমেন্টের ওপর অনার্সে ভর্তি, তৃতীয় বর্ষে ফাইনাল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হই। এদিকে পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলও ভাল নয়। কোন রকমমাত্র ৩য় বিভাগ। কী করব এই সার্টিফিকেট দিয়ে? অপরদিকে আমার ক্লাসমেটরা ভাল ভাল রেজাল্ট নিয়ে বহুদূর পৌঁছে গেছে। তাদের কাছে যেতেও আমি লজ্জ্বা বোধ করি। একদিন সিআরআইয়ের বাংলা বিভাগের চীনা ভাষা শেখার আসরে চীনা ভাষা শেখার গুর"ত্ব শুনতে পাই। তখন চীনা ভাষা শেখার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাই। কিন্তু ভাষা শেখা খুবই কঠিন। কিভাবে শিখব? রেডিও অনুষ্ঠানে প্রচারিত দুএকটি বাক্য আর শব্দ দিয়ে চীনা ভাষা শেখা অত্যন- দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।

২০০৫ সালের ১ জুলাই প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইনষ্টিটিউটে এক বছর মেয়াদি চীনা ভাষার জুনিয়র কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পাই। এই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আমি চীনা ভাষার ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম সংগ্রহ করি এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এই কোর্সে ভর্তি হই। ৩/৪ মাস ক্লাস করার পর একদিন স্যার বললেন- চীনা ভাষা যারা ভাল করবে চীন সরকার তাদেরকে স্কলারশীপ দেবে। এরপর চীনা ভাষা গভীর মনোযোগের সাথে শিখতে শুর" করি। ২০০৭ সালের ফেব্র"য়ারি মাসে চীনা দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত স্কলারশীপ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। উল্লেখ্য এই পরীক্ষায় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে ৯০০-রও বেশি প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিল। এমন কী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষক/ প্রফেসর পর্যন্ত। এদের মধ্যে থেকে আমরা দশজন স্কলারশীপের আওতায় আসি। আমার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ২০০৭ সালের ৩০ আগস্ট আমি চীনে আসি। চীনের চিলিন প্রদেশের চিলিন শ্রিফান্‌ বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষার ওপর লেখাপড়া করছি। এখানে আমার দু'বছর স্কলারশীপ পড়াশোনা শেষে দু'বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তী কোর্স সম্পন্ন করব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকা, নরওয়ে, থাইল্যান্ড, কানাডা, লাওস, ডেনমার্ক, প্যারাগুয়ে প্রভৃতি দশটি দেশের ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। এবছর আমি বাংলাদেশ থেকে এবং লাওস থেকে দু'জন স্কলারশীপ নিয়ে এখানে পড়তে এসেছি। আর বাকিরা সবাই নিজ খরচে পড়তে এসেছে। চুপিং-এ একমাস লেখাপড়ার খরচ, থাকা খাওয়া সহ আনুমানিক ২০০০ ইউয়ান।

৪ঠা এপ্রিল ২০০১ সন্ধ্যা ৬ টায় চীনা দূতাবাসের মিলনায়তনে মিলিত
হওয়া শ্রোতাদের মাঝখানে তাপস বিশ্বাস

কিন্তু বেইজিং-এ ৪০০০ ইউয়ানেরও বেশি। এখানে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার জন্য রয়েছে আধুনিক বিল্ডিং এবং স্পেশাল নিরাপত্তা। রাজধানী বেইজিং থেকে চুপিং-এর দূরত্ব ১৫০০ কিমি-রও বেশি। চুপিং শহরের চারদিকে রয়েছে অভাবনীয় সুন্দর ও আকষর্ণীয় সবুজ প্রকৃতি। এই সুদৃশ্য সবুজ প্রকৃতির মাঝে চীনারা নির্মাণ করেছে সুরম্য অট্টালিকা, যা না দেখলে কল্পনা করা যাবে না। এখানে আছে সুদৃশ্য কয়েকটি হৃদ যা পর্যটকদের ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করে। এককথায় চীনে আসলে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা মনে পড়বে না। চৈনিক সভ্যতার এই দেশে মানুষ খুবই শান্ত প্রিয়। সবাইকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানাই। আমার মোবাইল নম্বর: ০০৮৬৪৩৪৩২৯৬৫৭০।